যুক্তরাজ্যে করলার চাষ করার পদ্ধতি কি কি?

0
198

যুক্তরাজ্যে করলার চাষ করার পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো:

১. জলবায়ু ও স্থান নির্বাচন:

করলা উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে ভালো জন্মে। যুক্তরাজ্যের গ্রীষ্মকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) করলা চাষের জন্য উপযুক্ত।

পূর্ণ সূর্যালোকে (প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা) এবং ভালোভাবে বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় করলার চারা রোপণ করতে হবে।

মাটি সুনিষ্কাশিত এবং উর্বর হওয়া প্রয়োজন। দোআঁশ মাটি করলার জন্য ভালো।

২. বীজ বপন:

যুক্তরাজ্যে সরাসরি মাটিতে বীজ বপন করার চেয়ে প্রথমে ঘরের ভিতরে চারা তৈরি করে নেওয়া ভালো। এর জন্য এপ্রিল মাসের শুরুতে বীজ বপন করা যেতে পারে।

বীজ বপনের আগে ৬-৮ ঘণ্টা হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখলে অঙ্কুরোদগম ভালো হয়।

ছোট পাত্রে বা বীজ ট্রেতে ২-৩ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করুন।

পাত্রগুলিকে উষ্ণ ও আলো ঝলমলে জায়গায় রাখুন। মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখুন।

বীজ থেকে চারা বের হতে সাধারণত ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগে (মাটির তাপমাত্রা ২০-২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে)।

৩. চারা রোপণ:

মে মাসের মাঝামাঝি বা যখন রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকে, তখন চারাগুলিকে স্থায়ী জায়গায় রোপণ করা যেতে পারে।

দুটি চারার মধ্যে কমপক্ষে ৫০ সেন্টিমিটারের দূরত্ব রাখুন।

চারা রোপণের আগে মাটিতে জৈব সার (যেমন – কম্পোস্ট বা পচা গোবর) মেশান।

৪. পরিচর্যা:

মাচা তৈরি:

করলা একটি লতানো গাছ, তাই এটিকে বেড়ে ওঠার জন্য মাচা বা অন্য কোনো অবলম্বন (যেমন – trellis বা তারের জাল) তৈরি করে দিতে হবে। চারা লাগানোর সময় অথবা চারা একটু বড় হলে মাচা তৈরি করা যায়।

জলসেচন:

করলার নিয়মিত জল প্রয়োজন। মাটি শুকিয়ে গেলে জল দিন, তবে অতিরিক্ত জল দেওয়া উচিত না।

সার প্রয়োগ:

গাছের বৃদ্ধির সময় এবং ফল ধরার আগে ২-৩ বার জৈব সার দিন। তরল সার ব্যবহার করা যেতে পারে।

আগাছা দমন:

গাছের গোড়ার আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

ডাল ছাঁটা:

গাছের অতিরিক্ত ডালপালা ছেঁটে দিলে ফলন ভালো হয়। প্রধান লতা যখন ৮০-১০০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়, তখন প্রথম দিকের কয়েকটি পাতার নিচের দিকের শাখা ছাঁটলে নতুন শাখা বের হতে এবং ফল ধরতে সাহায্য করে।

পরাগায়ণ:

যদি দেখেন ফুল আসছে কিন্তু ফল ধরছে না, তাহলে হাত দিয়ে পরাগায়ণ করতে পারেন। পুরুষ ফুল (লম্বা ডাঁটাযুক্ত এবং ফুলের পিছনে ফল থাকে না) থেকে পরাগরেণু নিয়ে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে (ছোট ফলের মতো অংশ ফুলের পিছনে থাকে) আলতো করে স্পর্শ করুন।

৫. পোকামাকড় ও রোগবালাই:

করলা গাছে অ্যাফিড, শসা বিটল এবং ফলের মাছি জাতীয় পোকা লাগতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন।

পাতা ঝলসানো বা পাউডারি মিলডিউ রোগের আক্রমণ হতে পারে। এর জন্য উপযুক্ত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে পারেন।

৬. ফসল সংগ্রহ:

বীজ বপনের প্রায় ২-৩ মাস পর করলা তোলার জন্য প্রস্তুত হয়।

করলা যখন ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা ও গাঢ় সবুজ রঙের হয়, তখনই তা সংগ্রহ করা উচিত। বেশি পাকলে এটি তেতো হয়ে যায় এবং এর রঙ হালকা কমলা হতে শুরু করে।

ধারালো ছুরি বা কাঁচি দিয়ে ফল সাবধানে কাটুন।

নিয়মিত ফল সংগ্রহ করলে গাছে আরও ফল ধরতে শুরু করে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া পরিবর্তনশীল হতে পারে, তাই গাছের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

ঠান্ডা আবহাওয়ায় গাছকে রক্ষা করার জন্য পলিথিন টানেল বা গ্রিনহাউসের ব্যবহার করা যেতে পারে।

ভালো ফলনের জন্য সঠিক জাতের বীজ নির্বাচন করা জরুরি। স্থানীয় নার্সারি বা অনলাইন বীজ সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ভালো মানের বীজ সংগ্রহ করুন।

এই পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করে যুক্তরাজ্যে করলার সফল চাষ করা সম্ভব।